মস্কো থেকে ফিরে যবার সময় হয়েছে। কিভাবে দু-সপ্তাহ কেটে গেল ঠাহর হোল না! বন্ধুরা ব্রিজ খেলার আয়োজন করেছিল। আয়োজন না বলে প্রতিযোগিতা বলাই শ্রেয়। এই খেলাটায় আমার দুর্বার টান। খেলতে খেলতে চুরি-চামারি বের করেছি বিস্তর। ইন্টারন্যাশনাল কিংবা অকশান ব্রিজ যেমন উঁচু মাপের খেলা তেমনি আমাদের চুরি করার টেকনিকও অন্য লেভেলের।
যেমন আমার হাতে ক্লাবের কার্ড নেই। আমি কল দিলাম প্রথমেই দুটো ক্লাব! অপসিট পার্টি তখন মনে মনে ফুলে ফুলে হাসছে।তারা কোনমতে ডাক ছেড়ে দিতে পারলে বাঁচে। কিন্তু আমার পার্টনার জানে আমার হাতে সেই কার্ড নেই। সে কল ঘোরাবেই। তবে কখনো বা হিতে বিপরীত হয়ে যায়।
সে খেলা পুরো কসমস সেন্টার জুড়ে তু্মুল জমে গেল। আর আমার সময় চলে গেল হু-উস করে!
এর মাঝে আর ববির সাথে এলিনাকে নিয়ে আলাপ হয়নি। সে ও কিছু বলেনি আর আমিও কুলুপ এঁটেছি। ওদের সাথে আর শেষ দেখা হোল না। ববির মেয়েটার চেহারা বার বার চোখে ভাসছিল শুধু।
ফেরার সময়ে হুলস্থুল অবস্থা! কোন বন্ধু এখানে দু-চার দশ দিনের জন্য বেড়াতে আসে না বিশেষ। সে কারনে আমার সমাদার ছিল চরম। ফেরার দিন যেন একডজন গাড়ি আসল এয়ারপোর্টে এসকর্ট করে। নিজেকে বেশ ভিভিআইপি ভাবছিলাম।
বিদায়ের সময়ে সে কি জড়াজড়ি আর হুড়োহুড়ি-এ জন্মে যেন দেখা হবে না আর। আসলে সেই বয়সের আবেগটাই ছিল অন্যরকম।
বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট বড্ড বেশী ম্যাড়ম্যাড়ে লাগছিল। এয়ারপোর্টে নেমেই নিজের গাড়িতে সরাসরি চাঁটগায়ের পথে রওনা হলাম।
বছর ঘুরতে চলল। পুতিন সবে রাশিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছে। অর্থাভাবে কিংবা উন্নত জীবনের আশায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে রাশিয়ান রমণিরা। তারা অনেকেই নতুন সব দেশের ভাব ভাষা না বুঝে জড়িয়ে পড়েছে দেহ ব্যবসায়। রাশিয়ায় মুদ্রাস্ফীতি তখনো চরমে। ইনফ্লেশনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা বড্ড কঠিন ছিল তখন। চরম মাফিয়ার উত্থান হচ্ছে তখন। এর পাশাপাশী চরমপন্থি ন্যাকেড হেডদের দৌরাত্ম্য। ওদের নিঃশ্বংসতায় দক্ষিন এশীয়দের নাভিশ্বাস উঠেছে- লোকসানে আর হুমকির মুখে বিদেশীরা ব্যাবসা গোটাচ্ছে ।
মাতাল ইয়েলিৎসিনের হাতে হাঁসফাঁস করা সমগ্র জাতি পুতিনের দিকে চেয়ে আছে–কোন মিরাকল ঘটবে সেই আশায়।
ববির ব্যাবসার অবস্থা বিশেষ ভাল নয়। সরকারের হাতে টাকা নেই- ব্যাবসায়ীদের উপরে চাপ বাড়ছে। ওদিকে মাফিয়াদের রক্ত চক্ষু এদিকে সরকারী সন্ত্রাসীদের উৎপাত। সবারই ত্রাহি অবস্থা! দেশ চালাচ্ছে মাফিয়ারা- সরকার যেন ঠুঁটো জগন্নাথ।
সেবার মস্কো থেকে ফেরার পরে ববির সাথে হৃদ্যতা কমেছে খানিকটা। এখন আর চরম আবেগে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা হয় না। কথা হলে এলিনার কথা আর কখনোই জিজ্ঞেস করিনি। মেয়েটার কথাই বার বার জিজ্ঞেস করতাম।
ও বরাবরই বাচ্চাদের আদর করে। মেয়ের কথা তার মন আর্দ্র হোত। তাকে নিয়ে বেশ খোশ মেজাজে গল্প করত।
--------------------------------------
খবরটা পেলাম অন্য বন্ধু মারফৎ। ববি আমাকে এ ব্যাপারে কখনোই কিছু বলেনি;
এলিনা চাকুরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিল! যেমন করেই হোক চাকরি একটা তার চাই। এর আগে কিন্ডারগার্ডেনে শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা তার আছে। কিন্তু মস্কোতে তখন ইংরেজীর রমরমা বানিজ্য। সব মস্কোবাসীরা ইংরেজী শেখার জন্য পড়িমড়ি করে ছুটছে। ইংরেজীরে দখল না থাকলে শিক্ষকতার চাকরি জোটানো কষ্ট তখন।
অনেক খুঁজে 'পাদ মস্কো'তে( ডাউন টাউন) একটা স্কুলে চাকুরি জোটাল সে। বাসেই যাতায়াত করে। ববি বার বার গাড়ি নিতে অনুরোধ করলেও সে গাড়ি নেয় নি কখনো। বাচ্চাকে রাখে ‘দজেচিস্কি দোমে’( ডে কেয়ার বা চাইল্ড হোমে)। বাস থেকে নেমে বেশ খানিকটা নির্জন বনভুমির ধারের পথ হেটে যেতে হয়।
শরতের শেষ। শীত পড়া শুরু হবে তখন। গাছের পাতাগুলো বাহারি রঙ ছড়িয়ে ধরাভুমে লুটিয়ে পড়ছে টুপ টুপ করে। স্কুলের অফিসিয়াল কাজে ফিরতে দেরি হয়ে গিয়েছিল সেদিন ওর। এমনি এক সান্ধ্যকালে সেই বনভুমির ধার দিয়ে বাসস্ট্যান্ড দিয়ে আসার পথে ক’জন ছোকড়া পথ আগলে দাড়াল তার।
রাশিয়ায় কস্মিনকালেও যে ঘটনা শুনিনি সেদিন সেই ব্যতিক্রমী ভয়ঙ্কর ভয়াবহ নিঃশ্বংস ঘটনা ঘটল তার সাথে। সেদিন সন্ধ্যায় সে 'ব্রুটালি রেপড' হোল!!!
আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
প্রথম খন্ড প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link